বসন্ত এসে গেছে
-সুনির্মল বসু
তখন ফাগুন এসেছে, চারদিকে রংয়ের আগুন, কৃষ্ণচূড়া লালে লাল, রাধাচূড়ায় লেগেছে প্রেমের রং, মহাদেবচূড়া পবিত্রতা নিয়ে চেয়ে আছে, মান্দার গাছে লেগেছে অযুত শোভা।
ওরা সবুজ বনবীথিতে হাঁটছিল, শাশ্বতী আর অনিলেন্দু। শাশ্বতী যথেষ্ট সুন্দরী। ও খোঁপায় গুঁজেছে আজ পলাশ ফুল। পরনে মুর্শিদাবাদী সিল্কের শাড়ি। কী যে লাগছে ওকে আজ। যেন রমেশ পালের দেবী প্রতিমা।
সেদিন বইমেলায় তোমাকে খুব সিরিয়াস লাগছিলো..
-কখন?
-যেদিন তোমার বই প্রকাশ হলো।
-তাই বুঝি,
-হু,
-টেনশন ছিল, সবাই আমার লেখা নেবে কিনা,
-লেখার সময় টেনশন থাকে?
-নাহ, তখন তো কথাগুলো আপনিই বেরিয়ে আসতে চায়।
শাশ্বতী বলল, দ্যাখো চেয়ে বসন্ত এসে গেছে,
তাই তো দেখছি,
তোমার লেখায় কেবল প্রকৃতি,
পৃথিবীটা এত সুন্দর, আমি চোখ সরাতে পারি না,
কেন এমন ভাবা,
মা দুর্গার পিছনে যেমন চালচিত্র থাকে, তেমনি মানুষের জীবনের পেছনে থাকে প্রকৃতির ক্যানভাস,
ওরা একটা জলাশয়ের পাশে এসে বসলো।
একটা সত্যি কথা বলবে?
-কি?
– তুমি আমায় ভালোবাসো?
– তোমাকে দেখার আগে অনেক কবিতা পড়েছি, তোমার সঙ্গে দেখা হবার পর আমার জীবনই কবিতা হয়ে গেছে,
– ভ্যাট, বাজে বকো না,
সত্যিকারের ভালোবাসা মনকে আলো দেয়,
সেই আলোয় জীবনের সব অন্ধকার দূর হয়ে যায়।
-এই..
-কি..
– আমি আর কতদিন অপেক্ষা করবো?
– আমিও দেরি করতে চাই না..
ঝিলের ওপর সাদা এক ঝাঁক বক উড়ে গেল।
– কি সুন্দর দেখলে!
– হ্যাঁ তো। এই আকাশ, এই আলো, এই সবুজ, তুমি, আমি এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না।
– বিয়ের পর তোমার বাবা-মা আমাকে ভালোবাসবেন?
– হ্যাঁ, মা বলেন, আমার তো মেয়ে নেই…
– তাই বুঝি?
– শাশ্বতী দ্যাখো ঝাউবনের পাশে লাল সূর্য, দিন শেষ হচ্ছে। সব্বাই ক্যামেরায় ছবি তোলে, আমি মনে ছবি তুলে রাখি,
তোমার সেদিনের পার্কস্ট্রিটে বৃষ্টিতে ভেজার কথা মনে আছে?
– আছে তো,
– সেদিনও বৃষ্টি, আজও বৃষ্টি,
– ধ্যাত্, কি যে বলো,
– বলছি, ভালোবাসার বৃষ্টি!
– ও!
জানো আজকাল আমার একটা খুব মনে হয়, পৃথিবীটা এত সুন্দর, এত মায়াময়, আর এত ভালোবাসা, সব ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে, কেউ কাউকে ধরে রাখতে পারে না, কেন এত মায়া, তবে কেন আসা?
-মাকড়সার জালের মত ভালবাসার মানুষকে বাঁধতে পারাই জীবন।
– সেটা কি?
– ভালোবাসার জোর।
– ঠিক বলেছো, ভালোবাসা বট গাছের মত, কত তার ঝুরি, কত তার শিকড়-বাকড়, বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা টেকে না।বিশ্বাস আসে হৃদয়ের গভীরতা থেকে।জীবনটা সরল ছিল, কিছু স্বার্থপর মানুষ পৃথিবীটাকে অসুন্দর করে তুলেছে।একদিন বুঝতে পারবে, যখন সময় থাকবে না।
এখন রাত। আকাশে চাঁদ। আকাশে জ্যোৎস্না। ঝিলের জলে দেবদারু গাছের ছায়া। জলে তারার আলোর মায়া।বসন্তের বাতাস বইছে। মাধবীলতার বন দুলছে।
– শাশ্বতী, এবার তাহলে উঠি,
– চলো,
– দ্যাখো বাতাসে বসন্তের সুর বাজছে,
– সেটা কি,
– বসন্ত এসে গেছে। বসন্ত এসে গেছে।